বসন্তের আগমনে নওগাঁর প্রতিটি আম বাগান এখন মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো। আমের মুকুলের ম-ম ঘ্রাণে ছেয়ে গেছে চারপাশ। দূর থেকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে, গাছে গাছে ঝুলে থাকা অসংখ্য মুকুল। যা জানান দিচ্ছে আসন্ন আম মৌসুমের। কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। কারণ গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গাছেই এবার মুকুল এসেছে। ফলে এ বছর উচ্চ ফলনের আশা করছেন জেলার কৃষকরা।
জেলার সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় সাপাহার, পোরশা এবং পত্নীতলা উপজেলায়। সাপাহার ও পোরশার আম বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব বাগানেই এবার মুকুলে ছেয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো রোগবালাই নেই। তারপরও অনেকেই অগ্রিম সতর্কবার্তা হিসেবে বাগানে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর উচ্চ ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বগানে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার টন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গেল বছরের তুলনায় জেলায় এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার আমইড় গ্রামের আমচাষি মতিউর রহমান বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে কিছুটা ঘন কুয়াশা থাকলেও এখন আর সেটা নেই। ঘন কুয়াশা থাকলে মুকুলের ক্ষতি হয়। মুকুলের এই সময়টাতে উকুন পোকা এবং কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে, বাগানে এ বছর এসব পোকা নেই। গত বছর বাগানে ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল, এ বছর বাগানের প্রায় ৯০ শতাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আমের অনুকূলেই আছে। শেষ পর্যন্ত আবহওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি গত বছরের তুলনায় আমের ফলন অনেক বেশি হবে।
সাপাহার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাহাপুর গ্রামের আমচাষি রাকিব হোসেন বলেন, নিজস্ব ১৩ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। গত বছর আম বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা পেয়েছি। এ বছর বাগানের প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। তবে কীটনাশকের দাম আগের তুলনায় বেশি হওয়ায় কিছুটা বিপাকে আছি। কীটনাশকের দাম সহনীয় রাখার ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কমনা করছি।
সাপাহার উপজেলার বিদ্যানন্দি গ্রামের আমচাষি মজনু বলেন, নিজস্ব ৩ বিঘা জমিতে আম বাগান আছে। গত বছরের তুলনায় বাগানে মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। মুকুলের এই সময়টাতে উকুন পোকা, মাছি এবং কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে। উকুন, মাছি এবং কারেন্ট পোকা যেন মুকুলের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কীটনাশক প্রয়োগ করছি। গত মৌসুমে ৩ বিঘা জমি থেকে আম বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা পেয়েছিলাম। এবার শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ টাকা পাব।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর শুরু থেকেই আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কয়েক বছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এ বছর মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। প্রায় ৯০ শতাংশ গাছেই এবার মুকুল এসেছে। আমের উৎপাদন ঠিক রাখতে এই মুহূর্তে কৃষকদের প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক এবং পানি স্প্রের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আশা করা যাচ্ছে এ বছর আমের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন